অপরাধ প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জের ৫ ইউনিয়নের জন্ম নিবন্ধনে অতিরিক্ত টাকা গ্রহনের অভিযোগ উঠেছে। জেলার সদর উপজেলার এনায়েতনগর , কাশিপুর, ফতুল্লা, আলিরটেক ও গোগনগর ইউনিয়নে। এ সকল ইউনিয়ের বিরুদ্ধে অনলাইলে জন্ম নিবন্ধন প্রস্তত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য সাধারণ জনগনের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত টাকা গ্রহনকারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান- সচিব থেকে শুরু করে জন্ম নিবন্ধন প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা কর্মচারী ও অফিস সহকারী পিয়ন পর্যন্ত ভোগ করে থাকে।
বৃহস্পতিবার সকালে এনায়েতনগর ইউনিয়নে সরেজমিনে দেখা যায়, বাংলা ও ইংরেজীতে জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়ে একজন ব্যক্তি ইউনিয়নের বাহিরে আসে। সাথে আসে এই ইউনিয়নে একজন কর্মচারী। জানা যায় তার নাম অপু। এই ব্যক্তি অন্য কারও কাছ থেকে ২০০ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজের পকেটে রাখছে। এই ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে জন্ম নিবন্ধনের কার্যক্রম পরিচালনাকারীর সাথে যোগাযোগ করে জন্ম নিবন্ধন সনদ করার খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জন্ম নিবন্ধন করতে ১০০ টাকা লাগবে আর আপনি অপুর সাথে যোগাযোগ করেন। প্রতিবেদক সরকারী নিয়ম ৫০ টাকা খরচ অনুসরন করালে তিনি ১০০ টাকার কম হবেনা সাব জানিয়ে দেন।
অপরদিকে কাশিপুর এলাকার র্ফামেসি ব্যবসায়ী বলেন, কাশিপুর ইউনিয়নে জন্ম নিবন্ধন করতে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ পিতা মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র ও ১৫০ টাকা দিতে হয়। এছাড়া ইউনিয়নের রাস্তার পূর্বপারের মুদি দোকানী বলেন, বয়স অনুযায়ী টাকা দিতে হয় প্রতিটি জন্ম নিবন্ধনের জন্য ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত প্রদান করতে হয় সংশ্লিষ্ট কর্মর্কতা বা কর্মচারীকে।
এছাড়া ফতুল্লা ইউনিয়নের কাঠের পুল এলাকার বাসিন্দা বদিউজ্জামান জানায়, জন্ম নিবন্ধন করতে গিয়ে ৫০ টাকার পরিবর্তে অতিরিক্ত টাকা প্রদান করতে হয়েছে তাকে। তিনি বলেন, ইউনিয়নে জন্ম নিবন্ধন প্রস্ততকারী ব্যক্তিদের ৫০ টাকার অধিক টাকা দিলে তারা জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে অনেকটা দ্রুত করে দেয়। আর যারা ৫০ টাকা প্রদান করে জন্ম নিবন্ধনের জন্য তাদের দীর্ঘ সময় পোহাতে হয় সনদ পেতে।
অন্যদিকে আলিরটেক ইউনিয়নের বাসিন্দা রাকিব হোসেন বলেন, জন্ম সনদ করতে সরকারী ৫০ টাকা ফির সাথে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অথবা সচিবকে ১০০ টাকা প্রদান করতে হয় । আর কেউ অতিরিক্ত টাকা প্রদান না করলে তাকে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হয় না।
এছাড়া গোগনগর ইউনিয়নের সৈয়দপুর এলাকার বাসিন্দা অভি বলেন, এ ইউনিয়নে কত টাকা দিয়ে জন্ম সনদ করতে হয় তার কোন পরিমান নেই। যে যত টাকা দিয়ে পারে করে। ইউনিয়ন অফিসের লোকজনকে টাকা দিলেই দ্রুত কাজ হয়ে যায় আর টাকা কম দিলে সনদ পাবে কিনা তা অনিশ্চিত হয়ে পরে।
এনায়েতনগর ইউনিয়নের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অতিরিক্ত টাকা গ্রহনের অভিযোগের বিষয়ে ইউনিয়নের সচিব দিদার হোসেন বলেন, ০ থেকে ২ বছরের কম সময় ২৫ টাকা আর ২ বছরের অধিক বয়সীদের জন্য ৫০ টাকা ও স্থানীয় নাগরিকদের কাছ থেকে ফি নেওয়ার কথা রয়েছে। তবে ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কোন নগরীকের কাছ থেকে যদি অতিরিক্ত টাকা নেয় সেটা আমার অজানতে। তবে এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টাকা গ্রহনের অভিযোগের বিষয়ে আলিরটেক ইউনিয়নের সচিব আঃ রব মিয়া বলেন, বয়স অনুযায়ী জন্ম সনদ করেত টাকা দিতে হয় তবে ১০০ টাকার অধিক। আর আমি এ টাকা পয়সা ধরিনা। তবে ৫০ টাকার পরিবর্তে বয়স অনুযায়ী টাকা নেয়াটা অযোক্তিক। জন্ম সনদ প্রস্তুকারীদের কাছে খোজ করলেই জানতে পারবেন আমি কোন টাকা পয়সা ধরি কিনা। এড়াছা আলিরটেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিউর রহমানে সাথে যোগাযোগ করতে গেলে জানা যায় মোবাইল ফোন পানিতে পড়ায় তার সাথে সংযোগ স্থাপন করা যাবে না।
কাশিপুর ইউনিয়নের সচিব মোঃ বাহাউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ৫০টাকা সরকারী ফি আর কম্পিউটার অপারেটরের ৫০ টাকা। মোট ১০০ টাকা দিয়ে এখানে জন্ম সনদ করতে পারেন স্থানীয় নাগরিকরা। তবে এর চেয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে হয় এ কথা মিথ্যা বা আমার জানা নেই। জন্ম নিবন্ধন করে চেয়ারম্যানের ভাগিনা। এছাড়া যদি কোন ব্যাক্তি দালাল মারফত সনদ করতে আসে সেক্ষেত্রে হয়তো বেশি টাকা দিয়েছে। তবে আমরা দালালদের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছি কাশিপুর ইউনিয়নে।
এ বিষয়ে কাশিপুর ইউনিয়নের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম. সাইফুল্লাহ বাদলের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগটি মিথ্যা কথা। কারন আমার এখন ইউনিয়নে যাতায়াত আছে তবে কেউ যদি দালালের মাধ্যমে জন্ম সনদ করে সেক্ষেত্রে হয়তো বেশি টাকা দিয়ে করেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
গোগনগর ইউনিয়নের সচিব মাহবুবুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে জন্ম নিবন্ধন খরচ জানতে চাইলে তিনি একাধিকবার একি উত্তরে বলেন আপনি আসেন আমার এখানে চা খেতে বসে কথা হবে। বুঝেন তো সব কথা তো আর ফোনে বলা যায় না!
এড়াছা গোগনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নওশেদ আলী বলেন, জন্ম সনদ করতে ১০০ টাকা দিতে হয় এ ইউনিয়নে। ৫০ টাকা জন্ম সনদ বাবদ আর ৫০ টাকা উদোক্ত এছাড়া গরীবদের জন্য ফ্রিতে আমরা জন্ম সনদ করে দেই। তবে অতিরিক্ত টাকার বিষয়ে আমার জানা নেই অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
তবে ফতুল্লা ইউনিয়নের সচিবের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ফতুল্লা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লৎফুর রহমান স্বপন বলেন, প্রতিটি জন্ম নিবন্ধন বাবদ ৭০ টাকা করে প্রদান করতে হয় স্থানীয় নাগরিকদের তবে কেউ যদি উদোক্তাদের অতিরিক্ত টাকা প্রদান করে দ্রুত সময়ে জন্ম সনদ নিয়ে যায় এ ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না । আর আমাদের জন্ম নিবন্ধনের টাকার সাথে কোন সম্পর্ক নেই।
ইউনিয়নে পরিষদে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রস্তুত করতে অতিরিক্ত টাকা গ্রহনের অভিযোগের বিষয়ে নারায়নগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া দৈনিক সংবাদচর্চাকে জানান, অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য বা কাগজ পেলে অব্যশই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।